সকল মেনু

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের থ্রি জিরো তত্ত্ব

বদলে যাবে বিশ্বের অর্থনৈতিক ও সামাজিক চিত্র


শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বজুড়ে আলোচিত তাঁর থ্রি-জিরো তত্ত্বের জন্য। সেগুলো হচ্ছে দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা। আর তা অর্জনে লাগবে তারুণ্য, প্রযুক্তি, সুশাসন ও সামাজিক ব্যবসা। টেকসই উন্নয়নের এই তত্ত্বের প্রয়োগের মাধ্যমেই তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এগিয়ে নিতে চাইছেন বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।গ্রামীণ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রবর্তক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর এই অবদানের জন্য তিনি শান্তিতে নোবেল পান ২০০৬ সালে। এই ক্ষুদ্রঋণ ধারণার মূল লক্ষ্যই ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়া। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াও গোটা বিশ্বেরই চোখ টেকসই উন্নয়নে। বাংলাদেশে এই যাত্রায় প্রায় শূন্য থেকেই শুরু করতে হচ্ছে এই নোবেলজয়ীকে। আর এই লক্ষ্য অর্জনে সামনে থাকছে তাঁর নিজের তত্ত্ব থ্রি-জিরো। এক্ষেত্রে শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে দারিদ্র্য,বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ। এই তত্ত্বের ব্যাপারে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদের ভাষ্য,বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিজেই দারিদ্র্য সৃষ্টি করে এবং এই ব্যবস্থার অধীনে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব নয়। মানুষ এককভাবে দারিদ্র্য তৈরি করে না, আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামোর ভেতরেই তৈরি হয় দারিদ্র্য।এই লক্ষ্য অর্জনে তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন তারুণ্য, প্রযুক্তি, সুশাসন ও সামাজিক ব্যবসায়।তাঁর মতে,ভালো চাকরি না খোঁজে উদ্যোক্তা তৈরিতে জোর দিতে হবে। ড.মুহাম্মদ ইউনূস বলেন,আমরা জন্মেছি সমস্যা সমাধানের জন্য। কারও অধীনে চাকুরি করার জন্য নয়। তাই তরুণ প্রজন্মকে উদ্যোক্তা হতে হবে। কারও অধীনে নয়, বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে হবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েই। শান্তিতে নোবেলজয়ী একমাত্র বাংলাদেশি ড. মুহাম্মদ ইউনূস দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে নতুন একটি ধারণা ও তত্ত্ব নিয়ে পৃথিবীব্যাপী কাজ করে যাচ্ছেন। আর সেটি হলো সোশ্যাল বিজনেস বা সামাজিক ব্যবসা। সামাজিক ব্যবসার এ ধারণাটি পৃথিবীর প্রতিটি দেশই ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। এ মডেল প্রয়োগ করে বদলে যাচ্ছে বিশ্বের অনেক দরিদ্র দেশও। কী সেই সামাজিক ব্যবসা, যা নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বব্যাপী নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।

 

বিশ্বের অর্থনৈতিক মানচিত্রে দুটি তত্ত্ব দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত। আর তা হলো পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র। নানা কারণে এখন আর সমাজতন্ত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নেই। কিন্তু দোর্দণ্ড প্রতাপে পুঁজিবাদ বিরাজ করছে পৃথিবীজুড়ে। সেই পুঁজিবাদও আজ নানা কারণে সংকট ও প্রশ্নের সম্মুখীন। বিশ্বের ধনবাদী দেশগুলো এখন আর সনাতন পুঁজিবাদে সন্তুষ্ট নয়। তাদের অনেকে মনে করেন, পুঁজিবাদের একটা সংস্কার হওয়া দরকার। এরকম বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ক্ষুদ্র ঋণের উদ্ভাবক, বাংলাদেশের গর্ব, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছেন তার সাম্প্রতিক ‘সামাজিক ব্যবসা’ তত্ত্ব। এই ব্যবসায় বিনিয়োগকারী একটা সামাজিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বিনিয়োগ করবেন; কিন্তু সেই ব্যবসা থেকে বিনিয়োগকারী কোনো ধরনের মুনাফা গ্রহণ করবেন না। শুধু বিনিয়োগের অর্থ তুলে নিতে পারবেন। মুনাফার অর্থ দিয়ে নতুন কোনো সামাজিক ব্যবসা শুরু করতে পারেন অথবা বর্তমান ব্যবসার সম্প্রসারণ করতে পারবেন। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী ব্যবসায় মুনাফা বৃদ্ধির যে উন্মাদনা দেখা যায়, তার বাইরে ব্যবসাকে সামাজিক কল্যাণের জন্য নিয়ে আসাই সামাজিক ব্যবসার মূলকথা। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশে বিরাজমান নানা সমস্যার সমাধান করা হবে অনুদান বা চ্যারিটির ভঙ্গিতে নয় সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক ভঙ্গিতে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আজ সামাজিক ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে। ইউরোপের দেশ আলবেনিয়ার রাজধানী তিরানায় সামাজিক ব্যবসার আওতায় বৃদ্ধ নিবাস করা হয়েছে। ২০১২ সালে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। বর্তমানে এই বৃদ্ধ নিবাসে ২৫০ জন বয়স্ক ব্যক্তি রয়েছেন। চীন, জার্মানি, জাপান, স্পেন, হাইতি, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান, হংকং, উগান্ডাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রতিনিয়ত সামাজিক ব্যবসার প্রসার ঘটছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতে, বেকারত্ব দূর করতে সামাজিক ব্যবসা একটি কার্যকর ব্যবস্থা। বেকারত্ব এখন পুঁজিবাদের নতুন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মতে, এই সামাজিক ব্যবসা দিয়েই বর্তমান বিশ্বের বেকারত্বের সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তরুণ-তরুণীদের স্বপ্ন ও উদ্যোগ দিয়ে বেকারত্ব দূর করতে হবে। তার মতে, পৃথিবীতে এমন পরিস্থিতি আসবে যখন বেকারত্ব বলে কিছু থাকবে না। একজন সুস্থ শরীরের লোক বেকার থাকবে, এটা হতে পারে না। তিনি তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তোমরা ব্যবসার ধারণা নিয়ে আসো। আমরা তোমাদের সহযোগিতা করব।’ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতে, কাজের ক্ষেত্রে বয়সের কোনো সীমা থাকা উচিত নয়। অবসর বলে কোনো শব্দই থাকা উচিত নয়। রিটায়ারমেন্টকেই রিটায়ারমেন্টে পাঠানো উচিত। তাই সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে পৃথিবী থেকে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে মানুষকে সচ্ছল ও স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার এই সুদীর্ঘ সংগ্রামের পথে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশ এগিয়ে আসবে—এটাই তার প্রত্যাশা।

২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে দাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সামাজিক ব্যবসার সাতটি মূলনীতি ঘোষণা করেন। সামাজিক ব্যবসার সাতটি মূলনীতি হলো: ১.দারিদ্র্য বিমোচনসহ এক বা একাধিক বিষয় যেমন—শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি ও পরিবেশগত খাতে বিরাজমান সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিগত মুনাফাবিহীন কল্যাণকর ব্যবসা এটি। ২. সবার অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন করাই এ ব্যবসার লক্ষ্য।৩.সামাজিক ব্যবসায় বিনিয়োগকারীরা শুধু তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থই ফেরত পাবে, এর বাইরে কোনো প্রকার লভ্যাংশ নিতে পারবে না।৪.বিনিয়োগকারী তার বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত নেওয়ার পর বিনিয়োগকৃত অর্থের মুনাফা কোম্পানির সম্প্রসারণ কাজে ব্যবহৃত হবে।৫.এ ব্যবসা হবে পরিবেশবান্ধব।৬.এখানে যারা কাজ করবেন তারা ভালো কাজের পরিবেশ ও চলমান বাজার অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাবেন।৭.সামাজিক ব্যবসা হবে আনন্দের সঙ্গে ব্যবসা।

প্রথমত. দারিদ্র্যমুক্ত পৃথিবী গড়ে তুলতে হবে। দ্বিতীয়ত. বেকারত্বকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে চাকরি খোঁজার দিকে মনোনিবেশ না করে ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা হয়ে নিজেকে একজন চাকরিদাতা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তৃতীয়ত. ভবিষ্যতের পৃথিবীকে রক্ষায় কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। ড. ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার মডেল পৃথিবীর ৪০টির বেশি দেশে ১৩০টির বেশি প্রতিষ্ঠান ধারণ করে চলেছে। বিভিন্ন দেশে ৮০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে তার নামে ‘ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সোশ্যাল বিজনেস হল এমন একটি ব্যবসার ধরন, যার মূল লক্ষ্য হলো সমাজের সমস্যা সমাধান করা; মুনাফা অর্জন করা নয়। এ ব্যবসার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—ব্যবসার মাধ্যমে সমাজের উপকার সাধন, বিনিয়োগকারীরা শুধু তাদের বিনিয়োগ ফিরিয়ে পান, আর অর্জিত লাভ পুনরায় ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়। এর মাধ্যমে সমাজকল্যাণের অগ্রগতি সাধিত হয় এবং এটি একটি স্বনির্ভর ও টেকসই ব্যবসা পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে। সোশ্যাল বিজনেস বা সামাজিক ব্যবসা ধারণাটির প্রবর্তক ড. মুহাম্মদ ইউনুস। দারিদ্র্য বিমোচনের প্রত্যয় নিয়ে তিনি ক্ষুদ্র ঋণভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৬ সালে দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ প্রবর্তিত সামাজিক ব্যবসা এক ধরনের অর্থনৈতিক প্রকল্প, যার মূল লক্ষ্য মুনাফার পরিবর্তে মানবকল্যাণ।

২০০৮ সালে ড. মুহম্মদ ইউনুস “Creating a World Without Poverty Social  Business  and the Future of Capitalism ”  নামক বিখ্যাত বই প্রকাশ করেন। যেখানে তিনি পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা  ও সামাজিক ব্যবসায় এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।২০০৬ সালে সমাজকল্যাণের তাগিদ থেকে ড. মুহম্মদ ইউনুস ফ্রান্সের বহুজাতিক খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান Danone-এর সঙ্গে যৌথভাবে Grameen-Danone Foods Ltd. প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল তার গৃহীত প্রথম সোশ্যাল বিজনেস বা সামাজিক ব্যবসার উদ্যোগ। প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্য ছিল দরিদ্র শিশুদের অপুষ্টি দূর করা। এই প্রকল্পে অর্জিত মুনাফা বিনিয়োগকারীরা গ্রহণ না করে পুনরায় সমাজকল্যাণের উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ করেন। সোশ্যাল বিজনেসটি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও একটি অর্থনৈতিক মডেল হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে। একই বছর গঠিত হয় ইউনুস সোশ্যাল বিজনেস (YSB)—যার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ ইউনুস ছাড়াও ছিলেন সাসকিয়া ব্রুইস্টেন ও সোফি আইজেনম্যান। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় জার্মানির বার্লিনে অবস্থিত এবং এর কার্যক্রম বিস্তৃত বাংলাদেশ, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ভারত, কেনিয়া ও উগান্ডাসহ একাধিক দেশে।

সামাজিক ব্যবসায়ের কয়েকটি উদাহরণ :

১.গ্রামীণ – ডানোন (Grameen – Danone Foods Ltd.):এটি বাংলাদেশ(Grameen) এবং ফ্রান্স (Danone)এর যৌথ উদ্যোগে গঠিত। যার উদ্দেশ্য শিশুদের অপুষ্টি দূর করা এবং এ প্রতিষ্ঠানটির পণ্য ‘শক্তি দই ‘-কম দামে পুষ্টিকর দই। ২.গ্রামীণ শক্তি : যেটি প্রায় ২০ লাখের বেশি সৌর হোম সিস্টেম চালু করেছে।এর উদ্দেশ্যেই গ্রামীণ এলাকায় পরিবেশবান্ধব সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহ করা। ৩.গ্রামীণ ইউনিক্লো :এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান জাপানের Uniqlo.এ প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন পোশাক সরবরাহ করা। ৪. গ্রামীণ চক্ষু হাসপাতাল :যার উদ্দেশ্য কম খরচে চক্ষু চিকিৎসা দেওয়া। সাথে বিপুল মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যও সাধিত হয়।

সোশ্যাল বিজনেস হলো দরিদ্রতা ও সামাজিক সমস্যার বিপরীতে এক প্রকল্প। সামাজিক ব্যবসায়ের  উদ্যোগ এমন একটি ব্যবসার ধরন, যাতে ব্যবসা করাও সম্ভব হয় এবং এর মূল লক্ষ্য মানবকল্যাণও সাধিত হয়। বর্তমান বিশ্বের কাছে সামাজিক ব্যবসায় ধারণাটি অসাধারণ পরিবর্তনশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। বিশ্ব এখন নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের মধ্যে। কয়েক মাস আগেও বাংলাদেশের সব মানুষ সড়কে নেমে এসেছিল সমাজ পুনর্গঠনে। এক হাজারের বেশি মানুষ তাঁদের প্রিয়জন হারিয়েছেন। বিশ্বে প্রতিদিন যুদ্ধের মধ্যে হাজার হাজার শিশু ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে। সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে মানবকল্যাণকেন্দ্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য আমাদেরকে থ্রি জিরো লক্ষ্য পূরণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গবেষণা করতে হবে। সামাজিক ব্যবসা জানায় কীভাবে ঝুঁকিতে থাকা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যাবে, কীভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যাবে। এই ব্যবসায় মুনাফা সমাজের ক্ষমতাশালীদের পকেটে চলে যায় না। আরও মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে ও নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। বিশ্বব্যাপী অগ্রাধিকারের সঙ্গে সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের দর্শনকেও ধারণ করে।  তরুণদের প্রস্তাবই আগামী দিনের নীতিনির্ধারণী পরিকল্পনায় স্থান পাবে। এসডিজি ও থ্রি জিরোজ নিয়ে তরুণেরা সমস্যা সমাধানে প্রস্তাব করবেন, আশা করা যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা কী বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করবে তা যথাযথভাবে চিহ্নিত হয় না। বাংলাদেশে এখন শক্তিশালী নতুন কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে। এখন প্রয়োজন নৈতিক ও কৌতূহল মন। শুধু অর্থ উপার্জন নয়, দরকার সামাজিকীকরণ। অধ্যাপক ইউনূসের ধারণা নিয়ে দরিদ্রদের কাছে পৌঁছাতে হবে। অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশকে সামাজিক ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছেন। বাংলাদেশের জন্য সময় এখন একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জের ও বড় সুযোগের। সোলার সিস্টেম, বায়ো সিস্টেমকে কাজে লাগানোর সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। বিশ্ব এখন নজিরবিহীন জটিলতার সম্মুখীন। সমস্যা সমাধানে দরকার নতুন চিন্তাভাবনা। তরুণেরাই হবেন বাংলাদেশের আগামী দিনের স্থপতি।পুঁজিবাদের প্রথাগত বাধার সামনে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে সামাজিক ব্যবসা তিন দশক ধরে নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করছে। সামাজিক ব্যবসা শুধু ধারণা নয়, এটি বৈশ্বিক আন্দোলন বলে মনে করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস। বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চিরস্থায়ী কিছু নয়,চাইলেই নতুনভাবে গড়া যায়। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সামাজিক ব্যবসা (সোশ্যাল বিজনেস) শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পুরো বিশ্বকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। পৃথিবীতে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার একমাত্র সঠিক পথ হল সামাজিক ব্যবসা। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব। সামাজিক ব্যবসা এখন শুধু একটি ধারণা নয়, এটা বৈশ্বিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে শুধু ব্যক্তিগত মুনাফা নয়, মানব কল্যাণ ও টেকসই ভিত্তির ওপর পুনর্নির্মাণ করতে হবে। এই লক্ষ্য থ্রি জিরোজ বা তিনটি শূন্যকে কেন্দ্র করে: শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ। এই সময়ে সামাজিক ব্যবসা আর শুধু একটি ধারণা নয়, এটি এখন একটি বৈশ্বিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।   বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চিরস্থায়ী কিছু নয়। আমরা এটি পুনর্গঠন করতে পারি এমন একটি ব্যবস্থায় যা ব্যক্তিগত মুনাফার ওপর নয়, বরং মানব কল্যাণ ও টেকসই পৃথিবী নির্মাণের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে। সামাজিক ব্যবসা এমন একটি কাঠামো, যার মাধ্যমে বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে বের করা সম্ভব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

TOP