সকল মেনু

এই বর্বরতার শেষ কোথায়?

“শোনা যাবে প্যালেস্টাইন উদ্বাস্তুদের অসহায় চিৎকার
তস্কর বেগিন ভূষিত হবে শান্তির নোবেলে।”

কবিতার লাইনগুলো আমার আব্বু সৈয়দ আনোয়ার কামালের’শতাব্দীর শব্দ’কবিতা গ্রন্থের ‘শান্তির নোবেল’ কবিতা থেকে নেয়া হয়েছে।
সেই ছোটবেলা থেকে প্যালেস্টাইনের কথা শুনে বড় হয়েছি। ছোট থেকেই এক ধরনের মায়া অনুভব হতো প্যালেস্টাইনের অসহায় মানুষগুলোর জন্য। অথচ কি সমৃদ্ধশালী একটি দেশ। এখনো তো সমৃদ্ধশালী। না হলে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে কি করে তারা এখনো কথা বলতে পারে। তাদের দৃঢ়তা এবং আত্মসম্মান বোধ মাঝে মাঝে আমার শরীরের লোম খাড়া করে দেয়।


এবার না হয় প্যালেস্টাইনের আদি ইতিহাস একটু জানি।
প্যালেস্টাইন অঞ্চলটি ইতিহাসে’কানান’,’জুড়িয়া’ ‘প্যালেস্টাইন’ ইত্যাদি নামে পরিচিত ছিল।
বাইজান্টিয়ান, রোমান, ইসলামিক খেলাফত, ক্রুসেডার, ওসমানীয় সাম্রাজ্য (Ottoman Empire) ইত্যাদি বিভিন্ন শক্তি অঞ্চলটি শাসন করেছে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ( ১৯১৪_১৯১৮) অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ফিলিস্তিন অঞ্চলটি বৃটেনের নিয়ন্ত্রণে আসে। এটিকে বলা হয়’British Mandate of Palestine ‘
১৯১৭ সালে ব্রিটিশ সরকার’বেলফোর ঘোষণা'(Balfour Declaration) দেয়। যেখানে ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিনে একটি জাতীয় আবাসভূমি গঠনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এতে আরবদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ইউরোপ থেকে বিপুল সংখ্যক ইহুদি ফিলিস্তিনে অভিবাসন শুরু করে, বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও হলোকাস্টের পরে।
১৪ ই মে ১৯৪৮ সালে ইসরাইল স্বাধীনতা ঘোষণা করে। পরদিনই আরব রাষ্ট্রগুলো ইসরাইলের ওপর হামলা চালায় এবং প্রথম আরব ইসরাইল যুদ্ধ শুরু হয়।
এই যুদ্ধে ইসরাইল বিজয়ী হয় এবং তার আয়তন জাতিসংঘ প্রস্তাবিত সীমার চেয়ে বড় হয়ে যায়। প্রায় ৭ লাখ ফিলিস্তিনি নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়। এই ঘটনাকে বলা হয় ‘নাকবা'( আরবি শব্দ অর্থ: বিপর্যয়)। ফিলিস্তিনিরা শরণার্থী হয়ে যায় লেবানন, জর্ডান ও সিরিয়ায়।
বর্তমান ফিলিস্তিন মূলত দুটি অংশে বিভক্ত:
গাজা (হামাসের নিয়ন্ত্রণ)
এবং পশ্চিম তীর (ফাতাহ এর নিয়ন্ত্রণ)
ইসরাইল গাজা ও পশ্চিম তীরে বারবার বর্বরোচিত অভিযান চালায়। গাজার ওপর কঠোর অবরোধ আরোপ করে রাখে ফলে সেখানে মানবিক সংকট তৈরি হয়।
ইসরাইল পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি গড়েছে। এটিকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সংঘাতের মূল কারণগুলো:
-ভূমির মালিকানা দখল
-জেরুজালেমের উপর দাবি
-ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ফিরে যাওয়ার অধিকার।
-ইজরাইলের অমানবিক ও অসংবেদনশীল দমন নীতি
-আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইসরাইলের প্যালেস্টাইনের অসহায় ও বেসামরিক মানুষগুলো উপর বিশেষ করে শিশু ও নারীদের উপর পাশবিক নির্মম নির্যাতন।

গত দুই বছরে, বিশেষ করে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাতে প্যালেস্টাইনের শিশু ও নারী মৃত্যুর হার অত্যন্ত উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে গাজায় প্রায় ৬০,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

শিশু ও নারী নিহতের হার: জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গাজায় সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে প্রায় ৭০% হলেন নারী ও শিশু।

শিশু নিহতের সংখ্যা: ২০২৪ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত, গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে ৪৪% ছিলেন শিশু, যা প্রায় ১৫,০০০ জনের সমান।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘের উদ্বেগ: জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস এই উচ্চ মৃত্যুহারকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

উপরোক্ত তথ্য থেকে স্পষ্ট যে, গত দুই বছরে গাজায় সংঘর্ষে শিশু ও নারীর মৃত্যুহার অত্যন্ত উচ্চ এবং এটি আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি মানবিক সংকটকে আরও তীব্র করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।

“এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জন্ম নিয়েছে সে, অধিকার নিয়েছে তার”
— সুকান্ত ভট্টাচার্য, ‘ছাড়পত্র’ কবিতা

কিন্তু প্যালেস্টাইনের শিশুরা বেঁচে থাকার অধিকার টুকু পায় না। পিতা মাতা লাশ খুঁজতে থাকে। কখনো গর্ভাবস্থাতেই বাচ্চা মারা যায়। পড়ে থাকে শুধু তার কঙ্কাল। হাড়গোড় গুলোকে জোড়ো করে
পিতা তাকে কবর দেয়। এ কোন সভ্যতা, এ কোন মানব জীবন।‌ সৃষ্টিকর্তার অপার করুণার দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমাদের কি আসলেই আর কোন উপায় নেই??
এই প্রশ্নই আজ সবার কাছে রাখতে চাই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

TOP