সকল মেনু

পাহাড়ে জীবনের ঝুঁকি, তবুও বসবাস

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের তিন বিভাগে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের ফলে চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সতর্কবার্তায় এসব তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
অতিভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। এমন খবর পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষের মনে উদ্বেগ উৎকন্ঠা বাড়াবে এটাই স্বাভাবিক। এমন সময়ে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে লোকজনকে সচেতন করতে মাইকিং করে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশনাও দিয়ে থাকে। এমন ঘোষণা প্রতি বছরের চিত্র। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগের অবস্থায় ফিরে আসে। কার্যকর কোন উদ্যোগ আমরা দেখিনা। এমন হেলাফেলার কারনে পাহাড় ধসে প্রাণহাণির ঘটনা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

সরকারি হিসাবে চট্টগ্রাম নগরীর ২৬ পাহাড়ে এখনো বসবাস করছে সাড়ে ৬ হাজার পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ। অব্যাহতভাবে কাটার কারণে চার দশকে অন্তত ১২০টি পাহাড় প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। চট্টগ্রামে পাহাড় রক্ষায় বিভিন্ন সময় নানা সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয় না। বছরের পর বছর পাহাড় কাটা যেমন অব্যাহত থাকে, তেমনি কাটা পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের সংখ্যাও দিন দিন বাড়তে থাকে।

সূত্র জানায়, প্রতি বছর মৌসুমের টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামে পাহাড় ধস ও প্রাণহানির ঘটনা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর এবং আশপাশের এলাকায় গত ১৮ বছরে পাহাড় ধসে ৩০০ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এরপরও দায়িত্বশীলরা সিরিয়াস নয়। ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে। কিছুদিন তোড়জোড় দেখা যায়। ২০০৭ সালে পাহাড় ধসে ১২৭ জনের প্রাণহানির পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি পাহাড়ধস রোধে ৩৬টি সুপারিশ তুলে ধরে। এ ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত ৩০টি সভা করেছে কমিটি। প্রতিটি সভায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বসবাসকারীদের বাসায় অবৈধ বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে ১৮ বছরে সুপারিশগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই রয়ে গেছে কাগজে-কলমে।

বৃহত্তম চট্টগ্রামে ১৫ হাজার ৮০৯ বর্গমাইল এলাকাতেই মূলত পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে থাকে। এসব পাহাড়ের যেসব অঞ্চলে ঘনবসতি এবং মানুষের বিচরণ বেশি সেসব পাহাড় টিলাতেই দুর্যোগ-দুর্বিপাক বেশি ঘটছে। বান্দরবান ও আলীকদম উপজেলায় দুর্যোগপূর্ণ বেশি। তাছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরীর ১৩টি পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অপরদিকে চট্টগ্রাম জেলার মধ্যে জালালাবাদ পাহাড়, নবীনগর পাহাড়, হামজারবাগ, দেব পাহাড়, কুমবাগ পাহাড়, গোল পাহাড়, কৈবল্য পাহাড়, খুলশী পাহাড়, বার্মা কলোনী পাহাড়, হিলভিউ পাহাড়, জামতলা পাহাড়, এনায়েত বাজার পাহাড় ও বাটালী হিল পাহাড় অন্যতম। তাছাড়া কক্সবাজার শহরে পাহাড় কেটে অবৈধ বাড়ি তৈরি করা হয়েছে।

পাহাড় ধস একটি মারাত্মক দুর্যোগ, যা প্রতি বছর বর্ষাকালে আঘাত হানে এবং এতে বহু মানুষের জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই দুর্যোগ মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সবার নিজ অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা, প্রকৃতি ও পাহাড়বান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ এবং সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়নেই বাঁচবে পাহাড়, বেঁচে যাবে পাহাড়ি মানুষ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

TOP