আমার মৃত্যুর কল্পনা
কোন এক অনিশ্চিত পরিকল্পনা
অপেক্ষমান উদ্বোধন অনুষ্ঠান’
আমার মন খারাপ হলে আমার প্রয়াত পিতা কবি সৈয়দ আনোয়ার কামালের ‘অপেক্ষমান অনুষ্ঠান’ কবিতাটি
( শতাব্দীর শব্দ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত) আবৃত্তি করি। নিজের মৃত্যু চিন্তা আসার সাথে সাথে জ্যোতির মৃত্যুর কথা মনে আসে। সেই ম্যানহোলে পড়ে যাওয়া জ্যোতি যার জমজ বাচ্চা গুলো এখনো মার জন্য কান্না করছে। মনে পড়ে মাইলস্টোনের দগ্ধ, মৃত বাচ্চাগুলোর কথা। সবুজা খালা, মেহেরিন ম্যাডাম , মাসুকা ম্যাডামের কথা। আরো বলে যাব??
শিশু আসিয়ার কথা তো বলিনি। এখনো তো ভুলতে পারিনি মাগুরার আসিয়াকে। নর পিশাচটার ফাঁসির রায় হয়েছে। কিন্তু তাতেই কি সব মিটে যাবে। তাতেই কি আমরা তুলনামূলক পার্থক্য করতে পারব আইয়াম এ জাহেলিয়াত আর বর্তমান সমাজ এর সাথে।
ছেলে শিশু কি এখানে নিরাপদ? বরিশাল যাবার পথে এক অভুক্ত ছেলে শিশু খাবার ও কাপড়ের প্রলোভনে ধর্ষণের শিকার হলো দুই নরপশুর হাতে। মেরেই ফেলল বাচ্চাটাকে। তবে কি জন্মই আমার আজন্ম পাপ! বেশ কিছুদিন আগে মৌচাক মার্কেটে গিয়েছিলাম। পৈশাচিকভাবে এক শিশু কর্মচারীকে দোকানের মালিক মেরেছিল। আমি কেন কিছু বলিনি, সেই অপরাধবোধে আমি ভুগছি। আবার এখন মনে হচ্ছে প্রতিবাদ করলে আমাকেও হয়তো মারতো। হয়তো চুরির অপবাদ দিত। William Blake এর’The Chimney Sweeper’ (Songs of Experience) এর লাইনগুলো খুব মনে পড়ছে।
‘And are gone to
praise God and his
priest and king’
Who make up a heaven
of our misery’
আবার কখনো প্যালেস্টাইনের দুর্ভিক্ষ দেখছি। খাবার খেতে বসলে ভেতরে খারাপ লাগে কিন্তু কই মজার খাবারগুলো তো বাদ দিয়ে খাই না। হাজার প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। শিশু মনস্তত্ত্বের কঠিন জ্ঞান বিলি করতে চাই না। কিছু কথা লিখছি। কলম টাকে ভয় পাচ্ছি। মনে হচ্ছে কলমটা মনে হয় আমাকে নিয়ে হাসছে। বলছে “তুমি কি নিজেকে জাহির করার জন্য লিখছো নাকি”?
Sigmeund Freud Id,Ego, Superego নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন ‘The Ego and Id(1923) Beyond the pleasure principle (1920)
এই বইটিতে তিনি বিশ্লেষণ করেন কেন মানুষ মাঝে মাঝে কষ্টকর অভিজ্ঞতা বা স্মৃতিতে ফিরে যায়। এখান থেকেই তার আত্মরক্ষামূলক কৌশল (Defence Mechanism) ভাবনার শুরু হয়।
Civilization and Its Discontents(1930) বইটিতে ব্যাখ্যা করেন ব্যক্তিত্ব ও সমাজ কিভাবে সংঘর্ষে জড়ায়। Superego ও guilt কিভাবে গঠিত হয়।
এখন Id,Ego ও Superego কে একটু ব্যাখ্যা করছি।
Id: আমি যা চাই এখনই চাই! এই নীতিতে চলে। ভালো-মন্দ, সামাজিক নিয়ম কোনটাই মানে না।
Ego: বাস্তবতা বুঝে চলা। এটা Id এর চাহিদা ও বাস্তবতার মধ্যে সমঝোতা করে।
Superego: এটা আমাদের নৈতিকতা ও বিবেক আমাদের শেখায়।
লিটু শেখ মাগুরার ধর্ষণকারী ও হত্যাকারী নিষ্পাপ শিশু আসিয়ার। ৬ই মার্চ ২০২৪ তারিখে শিশু আশিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৩ই মার্চ ২০২৪ এই অভিশপ্ত পৃথিবী ছেড়ে ফুলের মত বাচ্চা মেয়েটা অনন্ত জীবনে চলে যায়। এইরকম হাজার হাজার লিটু শেখ ছিল ,আছে ও থাকবে। আসলে অপরাধ মনোবিদ্যা খুবই প্রয়োজনীয় একটি জ্ঞান। অপরাধী শাস্তি হলেও অপরাধের কারণ এবং তার বিকৃত মানসিকতার পর্যায়ক্রম গবেষণা খুবই প্রয়োজন। আমি Freud এক থিওরি এ কারণেই পর্যালোচনা করেছি। কিভাবে এই লিটু শেখরা তৈরি হয়। ধর্ষণ ,হত্যা এগুলো করার জন্য মনোজগতে কি ধরনের বিকৃত চাহিদা তৈরি হয় । নাকি শিশুকালের কোন নির্যাতন নিজের উপর হওয়া তাকে অপরাধী অথবা বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষরূপী পশু হিসেবে তৈরি করে। এখন আমি কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরছি। যেটা শিশুশ্রম এবং রাস্তায় বের হয় ওঠা বাচ্চাদের উপর তৈরি করা।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম প্রকাশিত শিশু অধিকার পরিস্থিতি ২০১৯ প্রতিবেদনে বলা হয় ২০১৯ সালে ৪৩৮১ জন শিশু বিভিন্নভাবে সহিংসতার শিকার হয়েছে। ১,৩৮৩ শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। নির্যাতনের শিকার শিশুদের মধ্যে ২০৮৮ জনের মৃত্যু হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয় সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ঢাকায় ১১৫ জন। এরপর আছে নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী ময়মনসিংহ ও গাজীপুরে। ২০১৯ সালে শিশু হত্যা বেড়েছে ৭.১৮ শতাংশ। ঘরে প্রতি মাসে ৩৭টি শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
ইউনিসেফ ও বি বি এস, ২০২৩ সার্ভে অনস্ট্রিট চিলড্রেন ২০২২ এর তথ্য মতে রাস্তায় বসবাসকারী শিশুদের ৮২.৯ শতাংশ নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয় পথচারীদের দ্বারা। ৪৯.৮ শতাংশ শিশু কাজের জায়গায় সহিংসতার শিকার হয়। এমআইসিএস ২০১৯ এর তথ্য মতে ১১.৩ শতাংশ শিশু (৫-১৭) বছর বয়সী শিশু শ্রম ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বা উভয় ক্ষেত্রেই নিযুক্ত হয়েছে।
Psychologist Freud এর মতে সুস্থ ব্যক্তিত্ব তখনই গঠিত হয় যখন Ego সঠিকভাবে Id ও Superego ওর মাঝে সমঝোতা তৈরি করতে পারে। আমাদের শিশুরা কি স্বাভাবিকভাবে বড় হচ্ছে। শুধু আমাদের শিশুরা না পাশ্চাত্য সমাজেও এই অস্বাভাবিক শিশু মনস্তত্ত্ব রয়েছে। যার ফলে ব্লু হোয়েল গেম এর শিকার হয়ে অনেক শিশু ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। কখনো স্কুলে গিয়ে বন্দুক চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। তাই এই শিশু মনস্তত্ত্ব খুবই জরুরী।
‘ঘুমিয়ে আছে সকল পিতা
সব শিশুরই অন্তরে’
হয়তো সহিংসতার শিকার খারাপ স্মৃতিতে ফিরে যাওয়া কোন শিশু বড় হয়ে ভয়ংকর কোনো রাক্ষস এ পরিণত হবে। আমি সম্প্রতিক কিছু ঘটনা উল্লেখ করতে চাচ্ছিলাম। আমাদের শহরাঞ্চলে এবং উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের মানসিক অবস্থান নিয়ে। আজকে থাক। এর পরের লেখায় এই বিষয়গুলো নিয়ে আসবো ইনশাল্লাহ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।