সকল মেনু

অন্তিমযাত্রা মঙ্গলময় হোক, হে তারুণ্যে প্রাণ সঞ্চারী

জীবনের দীর্ঘতা সীমানাহীন কারন মানুষ স্বপ্নের সমান্তরাল দীর্ঘতায় পৌছুতে পারে, স্বপ্নের ব্যপ্তি মানুষে মানুষে ভিন্ন হয়। এই দীর্ঘতার পরিমাপক বয়স, কর্ম, খ্যাতি, অর্জণ, অর্থ-বিত্ত, প্রভাব-প্রতিপত্তি অনেক বৈষয়িক, অবৈষয়িক বিবেচনা আসে। বিবেচনাগুলো সামাজিক স্তর ও পারিপার্শি¦কতার উপর নির্ভর করে।
নিপু ভাইয়ের ষাট বছর পূর্তিতে আয়োজন হলো, প্রকাশনা হলো নিপুর ষাট নামে। অনেকটা জীবিত থাকতেই নিজের চল্লিশা করে যাবার মতো। হাঁসি খুশিতে মিশুক নিপু ভাইয়ের বয়স ষাট যখন পেরুচ্ছিলো তিনি তরুণের মতোই চঞ্চল। শত অপূর্ণতা সত্বেও বাংলাদেশে মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমায়, ডাইরিয়া, কলেরাসহ মহামারি চিকিৎসার নিয়ন্ত্রণে আসায় গড় আয়ু ষাট পেরিয়ে পঁয়ষট্টিতে পৌঁছেছে। পরিসংখ্যান পড়ুয়া নিপু ভাই সেই গড় পেরিয়ে আরো বেঁচেছিলেন। তবুও তাঁর শূণ্যতা পুরণ করবার মতো কেউ আজ এই বন্ধ্যা শহরে নেই।
সব্যসাচীতার ব্যপ্তি নিপু ভাইকে বয়সের সীমানা পেরিয়ে অনেক বেশী মহত্তম করেছিল। সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে, কবিতা চর্চা, কাব্য আন্দোলন, কবিতা পত্র প্রকাশনা, লিটলম্যাগ সম্পাদনা, নাটক, নাট্য আন্দোলন, নাট্য পত্রিকা প্রকাশনা, বিজ্ঞান ধর্মী প্রকাশনাসহ বহু শাখায় নিজেকে জড়িয়ে প্রধান হয়ে ছিলেন কর্মী হিসেবে, সংগঠক হিসেবে, আয়োজক হিসেবে; সর্বোপরী সকল কর্ম পরিকল্পনার মধ্যমনি হিসেবে।
পেশাগত জীবনে মূদ্রন ও প্রকাশনা শিল্পে জড়িত থাকায় তিনি চট্টগ্রামের সৃজনশীল মূদ্রন ও প্রকাশনাশিল্পে বিশেষ অবদান রেখে গেছেন; প্রকাশকদের সংগঠনটি নেতৃত্বের মাধ্যমে শত সীমাবদ্বতা সত্বেও বইমেলার আয়োজনে জড়িত ছিলেন নিবিড়ভাবে।
শিক্ষাখাত সহ বিভিন্ন সামাজিক কল্যানমূলক কাজে নিপু ভাইয়ের সক্রিয়তা ও নেতৃত্ব তাঁকে জনারন্য থেকে আলাদা করেছে। তিনি চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট সদস্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ব্যাবস্থার সংস্কার ও পুঁজিবাদী শিক্ষা বানিজ্যে ব্যাস্ত শিক্ষকদের বণিকপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টতা ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানে ব্যস্ততার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকা রেখেছেন। চট্রগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল, চট্রগ্রাম কলেজ, জন্মস্থান মিরশরাইয়ের কলেজ সমূহ মাদ্রাসা, মসজিদ ব্যবস্থাপনায় থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সমাজসেবায় সদা কর্মঞ্চল ছিলেন।
আমরা যারা নব্বই দশকের শেষ পর্ব বা শূন্য দশকের কবিযশোপ্রার্থী ছিলাম, আমাদের কাছে তিনি কালধারা নামক প্রাচীন ও প্রতিনিধিত্বকারী সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতিক সংগঠনটির প্রধান প্রাণ। সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি’র জীবনানন্দীয় বিতর্কের পাশাপাশি কবিতার পাঠককেও কবির স্বীকৃতি দেয়া আল মাহমুদীয় তত্ত্ব সঙ্গে নিয়ে কালধারা স্বীকৃত কবি, কবি হয়ে ওঠার চেষ্টায় কবিতাকর্মীসহ সকলের প্রিয় সংগঠন হয়েছে। কালধারার বার্ষিক কবিতা পাঠের আসরে, নিয়মিত প্রকাশনায় নিপু ভাই নিবেদিত ছিলেন।
বন্ধু বৎসল মানুষটি সামাজিক সম্পর্ক চর্চা ও রক্ষায় খুবই সচেতন ছিলেন। সহপাঠী বা সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে তিনি যতোটা আন্তরিক, যত্নশীল তেমনি সদ্য পরিচয় হওয়া তরুনটির সঙ্গেও প্রাণবন্ত। বয়সের দূরত্ব পেরিয়ে নিয়ত তারুণ্যে অভিলাষি।
শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির অভিভাবক শূন্যতার নগর চট্টগ্রামে নিপু ভাইকে আরো প্রয়োজন ছিল। পরিসংখ্যান পড়ুয়া নিপু ভাইয়ের ষাট পূর্তিতে গড় আয়ুর চেয়ে বেশী বা শতবর্ষী হবার প্রার্থণা করে লিখেছিলাম। কর্ম”ঞ্চল, সৃজনশীল ও সৃষ্টিশীল মানুষগুলোর দীর্ঘায়ু অনঅগ্রসর সমাজ উন্নয়নের জন্য খুবই প্রয়োজন। আয়ুর সবটুকু জুড়ে তিনি পরিবারে, সমাজে প্রধান ও প্রিয়তার সাথে সৃষ্টিশীল ছিলেন। ব্যক্তিগত ভাবে আমি একজন প্রিয় অগ্রজ ও অভিভাবককে হারালাম।

মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু শনিবার সকাল সাড়ে ৬টায় ঢাকার শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। (ইন্নালিল্লাহে… রাজিউন)। আগের দিন রাতে ঢাকার ধানমন্ডিতে রিকশা থেকে নামার সময় বাইকের ধাক্কায় তিনি আহত হন এবং তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

TOP