পতিত আওয়ামী লীগ সরকার দেশের আর্থিক খাতকে এমন সংকটে ফেলেছিল, যা ‘অকল্পনীয়’ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তবে গত এক বছরে সেই খাতকে খাদের কিনারা থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অল্প সময়ের জন্য এসেছি, একটি পথচিহ্ন তৈরি করে দিয়ে যাব। পরবর্তী সরকার সেই পথ অনুসরণ করে অর্থনীতিকে পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর্থিক পরিবর্তনের জন্য সময় লাগে। আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান, প্রক্রিয়া ও ব্যক্তি পর্যায়ে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা গভীরভাবে প্রোথিত। তবে কিছু সৎ ও দক্ষ মানুষ আছেন, তাদের মাধ্যমেই আমরা সংস্কারের চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে আমরা আইসিইউ থেকে কেবিনে এবং কেবিন থেকে বাড়িতে ফিরেছি বললেও ভুল হবে না।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সাবেক ব্যাংকার ও শহীদ ইয়ামিনের বাবা মহিউদ্দিন আহমেদও। তিনি বলেন, ‘ব্যাংক এখনো পুরোপুরি ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। যারা ফ্যাসিবাদের সহযোগী ছিল, তাদের শাস্তি দিতে হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আমলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা দুর্নীতিতে যুক্ত ছিলেন, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা লজ্জিত হয় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শিক্ষা হয়ে থাকে।’
গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ছাত্রদের সঙ্গে জনগণ যুক্ত হলে কখনো কোনো সরকার টিকে থাকতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। এবারের আন্দোলনে বুদ্ধিজীবীরা অনুপস্থিত ছিলেন, তারা বিক্রি হয়ে গিয়েছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই শহীদদের ত্যাগ আমরা ভুলব না। ৫ আগস্টের আকাঙ্ক্ষা আর্থিক খাতে বাস্তবায়ন করব। অর্থ মন্ত্রণালয় ও অর্থ উপদেষ্টা আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন বলে আশা করছি।’
গভর্নর জানান, মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে এসেছে এবং তা ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আমানতকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘পুরোপুরি পরিবর্তন হতে দুই থেকে তিন বছর সময় লাগতে পারে। তবে আমরা আশাবাদী, পরিবর্তন হবে—এর জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’
তিনি জানান, আর্থিক খাত ঢেলে সাজাতে ‘নতুন ব্যাংক কম্পানি আইন’ প্রণয়ন করা হচ্ছে এবং খসড়া ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। তার আশা, এই আইন পাস হলে ব্যাংকিং খাত একটি স্থিতিশীল ট্র্যাকে ফিরে আসবে এবং ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।
জুলাই শহীদদের পরিবারকে সম্মাননা ও সহায়তা অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ৫ আগস্টের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ৮৫২ জনের গেজেটভুক্ত পরিবারের প্রত্যেককে ২ লাখ টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংকগুলো মিলে শহীদ ও আহতদের মোট ১৬ হাজার পরিবারে এই অর্থ পৌঁছে দেবে। কিছু প্রতিষ্ঠান আজ ও আগামীকাল আনুষ্ঠানিকভাবে এই সহায়তা প্রদান করবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।