সকল মেনু

নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি ও মুদ্রাস্ফীতি

জনগণের ভালমন্দের খেয়াল রাখা, জনগণের জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্র ও সরকারের প্রধান দায়িত্ব। এ ছাড়া গুরত্বপূর্ণ দায়িত্ব গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দেশের মানুষের প্রাতাহিক জীবনে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের বাজার ঠিক রাখা, যাতে দেশের জনগণ আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য রেখে জীবনধারণ ও শান্তিতে বসবাস করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে সরকারের বাজার ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত দুর্বল আর এই দুর্বলতার সুযোগে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যাবসায়ী অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। এই সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে সরকারকে থোড়াই কেয়ার করে উল্টো চোখ রাঙায়। নিত্যপণ্যেরে বাজার যেনো এক পাগলা ঘোড়া। লাগাম টানার কেউ নাই। বড় ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং মধ্যস্বত্বভোগীরা মিলে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে যাচ্ছে বাধাহীন ভাবে। সরকারের দুর্বল বাজার তদারকির কারণে দেশের জনগণকে তারা জিম্মি করে রেখেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বহীনতার কারণে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনা। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর তাদের অপারগতা ঢাকতে প্রায়শই লোকবলের ঘাড়তির কথাটি ফলাও করে প্রকাশ করে থাকে এবং হঠাৎ হঠাৎ দু’একটি  অভিযান পরিচালনা করে বটে কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয় না। নিত্যপণ্যের বাজার এখন মুনাফাখোর লুটেরাদের হাতে জিম্মি। কোন ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়ায় অসৎ ব্যবসায়ীগণ ইচ্ছামত পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন ধারণ দিন দিন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে ।  অন্তরে জ্বালা নিয়ে ডুকরে কাঁদে সাধারন মানুষ, তাদের কণ্ঠে ক্ষোভ ঝরে কিন্তু প্রতিকার পায় না। বাজারে গেলে তারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। ভরা মৌসুমে শাকসবজি তরিতরকারির দাম এতটায় উচ্চমূল্য যে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নাগালের বাইরে চলগেছে। ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ অথচ সেই ইলিশ মাছ সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য না থাকায় নিম্ন আয়ের মানুষ গুলো অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি মানুষকে অধিক বিপদে ফেলেছে। জুন মাসে কিছুটা কমে খাদ্য দ্রব্যে নিত্যপণ্যে মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ প্রায় ৮.৫০% প্রায় । যা গত মে মাসে ছিলো ৯.৫% এর অধিক।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বর্তমান জবর  সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও মুদ্রার বিনিময় হার এবং সুদহার বাজারভিত্তিক করার মতো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কারণে নিত্যপণ্যের বাজারে বড় কোনো প্রভাব পড়েনি। বিশ্বে এখন নানা কারণে নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বগতি এর মধ্যে প্রধান কারণটি হচ্ছে ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ। বিশ্বের শস্য ভাণ্ডার নামে খ্যাত ইউক্রেন এখন পুরোমাত্রায় শস্য রপ্তান্তি করতে পারছেনা। অন্যদিকে রাশিয়ার উপর আমেরিকার নানা ধরণের নিষেধাজ্ঞা ব্যাপারটিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্র করতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে যেই ব্যবসায়ী সেই রাজনীতির সাথে জড়িয়ে একাকার হয়ে গেছে। অপ্রিয় হলেও সত্য বর্তমানে ষাট ভাগের বেশী ব্যবসায়ী কোন না কোন ভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত।
প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থা গড়ে না তুলতে পারলে নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। নিত্যপণ্য আমদানি করেও কোন ফল মিলছেনা। এর বড় কারণ আমদানি কারক মুষ্টিমেয় কিছু বড় মাফিয়া। এরা একে অপরের যোগসাজশে পণ্যের দাম অত্যধিক হারে বাড়িয়ে দিয়ে জনগণের পকেট কেটে নিজেদের পকেট ভরছে।
সাধারণ কোনো ছোটখাটো আমদানি কারক ভোগ্যপণ্য আমদানি করতে গেলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। বড় ব্যবসায়ীদের যোগসাজসে জাহাজ থেকে পণ্যখালাসে বিলম্ব ঘটানো হয়। যাতে ছোটখাটো আমদানি কারক প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পরবর্তীতে আমদানি করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। মাফিয়া চক্র এমন ভাবে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা বাণিজ্য বিশেষ করে ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে এদের কাছে সরকার অসহায় আত্মসমর্পণ করে আছে। নিত্যপণ্যের বাজার নাগালের মধ্যে রাখতে হলে যে দেশ থেকে ভোগ্যপণ্য আমদানি করলে আমাদের ভোগ্য পণ্যের দাম কম পড়বে এবং কম সময়ে আমাদের দেশে পৌঁছবে, সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে আমরা সে দেশ থেকেই আমদানি করবো । দেশ ও জনগণ তাতে লাভবান হবে। অপর দিকে ভোক্তা অধিদপ্তরের লোকবল বাড়িয়ে নিয়মিত বাজার তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে এবং অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেই সাথে সরকারের দায়িত্ব হতে হবে মুদ্রাস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে এনে বাজার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

TOP