নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি বলেছেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে নারীর প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, গর্ভপাত এবং সন্তান জন্মদানে মা ও শিশু উভয়ের মৃত্যুর মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বাড়ছে। তাই নারী ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের জোরালো দাবি জানাচ্ছি। বুধবার (৯ অক্টোবর) সকাল ১১টায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে তামাক নিয়ন্ত্রণে সাংবাদিকদের কার্যকর ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে নারী মৈত্রীর আয়োজনে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে সাংবাদিকদের নিকট প্রত্যাশা ও করণীয়’ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন। নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে বিশেষজ্ঞ অতিথি ছিলেন অনকোলজিস্ট প্রফেসর ডা. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রেসিডেন্ট মো. মোস্তাফিজুর রহমান, লীড পলিসি এ্যাডভাইজার, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) বাংলাদেশ এবং প্রাক্তন চেয়ারম্যান, বিসিআইসি।
বিশেষ অতিথি ছিলেন হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি, গ্লোবাল টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম মেহেদী, প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদক সোহরাব হাসান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য শাহনাজ বেগম পলি এবং নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ঢাকা ব্যুরো প্রধান এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জুলহাস আলম। এ ছাড়াও আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ৭১ টিভির স্পেশাল করস্পনডেন্স সুশান্ত কে সিনহা, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশ এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. আব্দুস সালাম মিয়া এবং ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশ এর কমিউনিকেশনস ম্যানেজার হুমায়রা সুলতানা।
তামাক কোম্পানিগুলোর নানামুখী অপ-কৌশলে বিভ্রান্ত না হওয়ার কথা জানান সুশান্ত কে সিনহা।
তিনি বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের অধিকতর সংশোধনী আনার যে উদ্যোগ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে একটি সময়োচিত এবং জনবান্ধব উদ্যোগ। তবে বেশ কিছু ধাপ পার হলেও আইনটিকে চূড়ান্ত রূপ পেতে হলে আরও কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। এখনও এটি পাশের অপেক্ষায় রয়েছে। এটিকে আইনে রূপান্তরের পথে নানা রকম বাধা আসার আশঙ্কা রয়েছে, বিশেষ করে সংশোধনীর বিপক্ষে তামাক কোম্পানিগুলো নানামুখী অপ-কৌশল ও অপ-তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা নানা রকম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করে জনবিভ্রান্তি তৈরি করছে। এক্ষেত্রে আমাদের সাংবাদিক বন্ধুদেরকে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে। রাশেদ রাব্বি বলেন, তামাক থেকে সরকারের যে রাজস্ব আয় আসে তার চেয়ে তামাক ব্যবহারজনিত কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা বাবদ ব্যয় ৩৪ শতাংশের বেশি। ক্যান্সার সার্ভে-২০১৮ এর প্রতিবেদনে, রাজস্ব আয় প্রায় ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। চিকিৎসা ব্যয় প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। তামাকের কারণে বার্ষিক ক্ষতি প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। সুতরাং মানুষের ভ্রান্ত ধারণা দূর করার পাশাপাশি প্রয়োজন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা। আর একটি প্রাণও যাতে না হারাতে হয় তামাকের কারণে সে প্রেক্ষাপটে সোহরাব হাসান বলেন, প্রতিদিন মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন এই ভয়ঙ্কর তামাকের আগ্রাসনে। তামাকের এই সর্বগ্রাসী আগ্রাসন ও তামাক মহামারি আমাদের জনস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। আমাদের তামাকের ভয়াবহতা সম্পর্কে আরও সোচ্চার হতে হবে। পাশাপাশি তামাক কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করতে হবে।
প্রিন্ট/ডাউনলোডঃ ১২ই আগস্ট, ২০২৫, দুপুর ১২:২০
© স্বত্ব দৈনিক সমধারা ২০২৫
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি