ডেঙ্গুর দাপটে রাজধানীবাসী আতঙ্কের মধ্যে জীবনযাপন করছে। আগামী আগস্ট মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ জুলাই মাসে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে, তাতে এডিস মশা বাড়তে পারে। এছাড়া বর্ষার মূল মৌসুমের পরে ডেঙ্গুর প্রকোপের নজির এর আগেও রয়েছে। এখনই মশক নিধনে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া না হলে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সবাইকে সতর্ক এবং সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৬৯ জন। এর মধ্যে শুধু জুনেই আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৯৫১ জন। জুলাই মাসও উদ্বেগজনক।
কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা জানান, বৃষ্টির কারণে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে, ওয়াসার মিটারের গর্তে জমে থাকা পরিষ্কার পানি, ফুলের টবে জমে থাকা পানি, ফ্রিজের নিচে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশার প্রজনন ও বংশ বিস্তার ঘটে।
রাজধানীতে মৌসুম শুরুর আগেই বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রভাব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকার দুই সিটির ১৩টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের থেকেও বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার আওতাধীন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অধীন গত ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসে চালানো প্রাক-বর্ষা জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে একলাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৭৫ জন। ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে ডেঙ্গু রোগে তখন ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া অনুসরণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টি হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এখনো ডেঙ্গুজ্বরের কোনো প্রতিষেধক বের করতে পারেনি সরকার। ডেঙ্গু থেকে রেহাই পেতে হলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আইইডিসিআরের তথ্য মতে, সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার থাকে।
সাধারণত মশক নিধন কার্যক্রমের স্থবিরতা, গাইডলাইনের অভাব এবং মানুষের অসচেতনতাই ডেঙ্গুর প্রকোপের জন্য দায়ী। হঠাৎ থেমে থেমে স্বল্পমেয়াদি বৃষ্টিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা খুব বেশি মাত্রায় প্রজনন সক্ষমতা পায়। ফলে এডিস মশার বিস্তারও ঘটে বেশি। এ মশা যত বেশি হবে ডেঙ্গুর হারও তত বাড়বে। উৎস বন্ধ না করতে পারলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি থেকেই যাবে।
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তারা বছরজুড়ে মশক নিধন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সিটি কর্তৃপক্ষের ভাষায়, এডিস মশার প্রজননস্থল শনাক্ত ও ধ্বংসে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিশেষ কিছু মৌসুমি কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তব চিত্র বলছে, এসব কার্যক্রম এখনও কাঙ্ক্ষিত সুফল আনতে পারেনি।
মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) ১৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বরাদ্দ রাখে প্রায় ১১০ কোটি টাকা। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বরাদ্দ রাখে ৪৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে গত এক বছরে ঢাকার মশা নিয়ন্ত্রণে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। তবুও নিয়ন্ত্রণহীন মশা, অতিষ্ঠ নগরবাসী।
সার্বিক বিষয় নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘বর্ষার মৌসুমকে মাথায় রেখে ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা দুটি স্তরে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আমাদের নিয়মিত মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলছে, পাশাপাশি বিশেষ মশক নিধন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম এবং জনগণকে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে কাজ পরিচালনা করছি।’
অন্যদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘মশার ওষুধ ঠিকমতো ছিটানো হচ্ছে কি না, সেটি আমরা তদারকি করছি। আমাদের কর্মীরা মাঠে আছে, তারা নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি নগরবাসীকেও নিজ নিজ বাসাবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে আমরা আহ্বান জানিয়ে আসছি।’
প্রিন্ট/ডাউনলোডঃ ১২ই আগস্ট, ২০২৫, বিকাল ৪:০৪
© স্বত্ব দৈনিক সমধারা ২০২৫
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি