সমধারা

আগস্ট ৬, ২০২৫ , ৪:৪৯ অপরাহ্ণ

সংস্কারের মুলা ঝুলিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার চেষ্টা করছে সরকার : কাদের গনি চৌধুরী

সমধারা রিপোর্ট

বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্যসচিব এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, ‘এই সরকার সাংবাদিকদের দাবিসহ জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিচার ও ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান বিলোপে কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি। সাংবাদিক সমাজের দাবি ছিল, সাগর-রুনির হত্যার বিচার, সাংবাদিকদের সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন ও সাইবার সিকিউরিটি আইন বিলোপ করা। সরকার সেই দাবি পূরণ করতে পারেনি। আমরা অবিলম্বে গণতন্ত্রের পূর্ণরূপ দেখতে চাই।’

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে আয়োজিত ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের অবসানে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সাংবাদিক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) যৌথভাবে এ সমাবেশের আয়োজন করে। এতে ডিইউজে সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন।

সমাবেশে বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম।

সমাবেশে কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘দেশ থেকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করার কার্যকর উদ্যোগ দেখিনি। দৃশ্যমান সংস্কার করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। সংস্কারের মুলা ঝুলিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার চেষ্টা করছে সরকার।

দেশের মানুষ ১৭ বছর ধরে ভোটাধিকার হারিয়েছে। সেটি পূনঃপ্রতিষ্ঠায় কার্যকর উদ্যোগ নেই। তাই দ্রুত জনগণকে ভোটাধিকার ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে।’

নির্বাচন না দিয়ে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার টালবাহানা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের কার্যক্রম ফ্যাসিস্ট হাসিনার ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। আমরা অবিলম্বে গণতন্ত্রের পূর্ণরূপ দেখতে চাই।

একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের রূপরেখার দাবি জানিয়ে কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘সংস্কারের মুলা ঝুলিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পাঁয়তারা সাংবাদিক সমাজে মেনে নেবে না।’

তথ্য উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি এক-এগারোর আলামত দেখতে পান, এটা আপনার সরকারের ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতার জন্য সেই দিনই পদত্যাগ করা উচিত ছিল। রাষ্ট্রীয় পদে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ধরনের বালখিল্যতা করা যায় না। এই দেশের মানুষ কখনোই এক-এগারো হতে দেবে না। তথ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় ফ্যাসিবাদীদের পূনর্বাসন করা হচ্ছে বলে তার তীব্র নিন্দা জানান তিনি।

গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে সাংবাদিকদের অবদানের কথা উল্লেখ করে কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘গত বছরের ৩ আগস্ট উত্তাল সময়ে আমরা রাজপথে হাজারখানেকের বেশি সাংবাদিক নিয়ে মিছিল করেছি। আমরা ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আবার ৪ আগস্ট যখন কেউ ঘর বের হতে পারছিল না তখন ২ হাজারের বেশি সাংবাদিক ও পেশাজীবীদের নিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে আমরা সমাবেশ করেছি। এই সময়ে আমাদেরকে চারদিক থেকে ঘেরাও করে নির্মম অত্যাচার করা হয়েছে। নির্বিচারে গুলি করা হয়েছে। আমাদের প্রেস ক্লাবে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। সেই সময়ের দালাল গোষ্ঠী প্রেস ক্লাবের চারিদিক থেকে তালা মেরে রেখেছিল। তার পরও আমরা দমে যাইনি। হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ৬৭ জন সাংবাদিক জীবন দিয়েছেন।’

সাংবাদিকদের নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিষ্ঠান নোংরামি করছে উল্লেখ করে তিনি আরা বলেন, ‘যাদের রাজপথে পাশে পাইনি  ও যাদের চিনিও না তাদের জুলাই সাহসী সাংবাদিক বানিয়ে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। পক্ষপাতদুষ্ট এই তালিকা সাংবাদিক সমাজ প্রত্যাখ্যান করছে।’

এ সময় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে আমাদের প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হয়েছে। চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়নি। ফ্যাসিবাদের বিচার করা ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই হবে আমাদের পরিপূর্ণ বিজয়। নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান নিয়ে হচ্ছে কি না, সেটি দেখতে হবে। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট জুলাইযোদ্ধাদের যে বিতর্কিত তালিকা করেছে সেটি অনভিপ্রেত। বিপ্লবের চেতনা যেন আমাদের মধ্য থেকে হারিয়ে না যায়।’

সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের মন থেকে রাজনৈতিক দাসত্ব ও উপনিবেশবাদ চিন্তা-চেতনা বিলুপ্ত করতে হবে।’ ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেল কেন বন্ধ হলো না? প্রশ্ন রাখেন তিনি।

ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কালের কণ্ঠের যুগ্ম সম্পাদক সাঈদ খান বলেন, ‘আমরা দুঃশাসন থেকে পূর্ণ মুক্ত হতে পারিনি। এখনো সাংবাদিকরা কষ্ট ও অপমান সহ্য করছেন। সম্প্রতি সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে জুলাই সাহসী সাংবাদিক তালিকা করেছে। সেই তালিকা আমি প্রত্যাখ্যান করছি। আবেদন করে কেন কেন সাহসী সাংবাদিকদের তালিকা করা হলো। বিশ্বে এমন নজির আছে বলে আমার জানা নাই। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এই ধরনের অগ্রহণযোগ্য কার্যক্রমকে প্রত্যাখ্যান করছি। ফ্যাসিবাদের দালালরা এখনো প্রশাসনসহ গণমাধ্যমে ঘাপটি মেরে আছে। এদের দ্রুত চিহ্নিত করে উৎখাত করতে হবে। না হলে দোসররা ফ্যাসিবাদ ফিরিয়ে আনবে।’

প্রিন্ট/ডাউনলোডঃ ১২ই আগস্ট, ২০২৫, সকাল ১১:৫৮

© স্বত্ব দৈনিক সমধারা ২০২৫

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

প্রিন্ট করুন

সেভ করুন