সমধারা

আগস্ট ৬, ২০২৫ , ৬:৪৯ অপরাহ্ণ

জুলাইয়ের ফুলগুলো

তোমাদের রক্তবীজে ফুটুক ফাল্গুনের বসন্তপরাগ

সমধারা রিপোর্ট

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে কমপক্ষে ১৩৩ শিশু শহীদ হয়েছে। তাদের মধ্যে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের শ্রমে নিয়োজিত শিশুরাও রয়েছে। এই শিশুদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছিল ১১৭ জন। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
শহীদ হওয়া সবচেয়ে ছোট শিশুর বয়স ৪ বছর, নাম আবদুল আহাদ। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে নিজ বাসার বারান্দায় গত বছরের ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়েছিল সে। পরদিন ২০ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
আহাদের মতোই বাসায় থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে আরও তিন শিশু। তারা হলো রাজধানীর মিরপুরে সাফকাত সামির (১০), উত্তরায় নাঈমা সুলতানা (১৫) ও নারায়ণগঞ্জে রিয়া গোপ (৬)।
আর গণ-অভ্যুত্থানে প্রথম কোনো শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৭ জুলাই। মো. সিয়াম (১৫) নামের ওই শিশু ভোলা থেকে ঢাকায় খালাতো ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছিল।
শিশু বলতে ১৮ বছরের কম বয়সীদের বোঝানো হয়েছে। বাংলাদেশের শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী সবাই শিশু।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেট অনুযায়ী, ২ আগস্ট পর্যন্ত শহীদদের তালিকায় ৮৪৪ জনের নাম ছিল। তবে রোববার (৩ আগস্ট) রাতে ৮ জনের নাম বাদ দিয়ে আরেকটি গেজেট করেছে মন্ত্রণালয়। এই গেজেট অনুযায়ী, শহীদের সংখ্যা এখন ৮৩৬ জন।
দেখা গেছে, শহীদ হওয়া শিশুদের মধ্যে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ৯১ জন। আর অনানুষ্ঠানিক বিভিন্ন খাতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করত ৪১ জন। এর বাইরে চার বছর বয়সী আহাদও রয়েছে।
শহীদ হওয়া শিশুদের মধ্যে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ৯১ জন। আর অনানুষ্ঠানিক বিভিন্ন খাতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করত ৪১ জন। এর বাইরে চার বছর বয়সী আহাদও রয়েছে। বেঁচে থাকলে এ বছরের জানুয়ারি থেকেই স্কুলে যেত আহাদ। তার মৃত্যুর দুই মাস পর রায়েরবাগের বাসা ছেড়ে মিরপুর-১ নম্বর এলাকায় চলে যায় পরিবারটি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র–জনতার বিক্ষোভ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মী হামলা ও গুলি করেছিলেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরও বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুলি ছুড়েছেন। সে সময়ও অনেকে শহীদ হয়েছেন। যেমন উত্তরার জাবির ইব্রাহিম (৬)। মা–বাবার সঙ্গে বিজয় মিছিলে গিয়ে সে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।
দেখা গেছে, শহীদ হওয়া শিশুদের মধ্যে মেয়েশিশু চারজন। তারা হলো রিয়া গোপ (৬), নাঈমা সুলতানা (১৫), রিতা আক্তার (১৭) ও নাফিসা হোসেন মারওয়া (১৭)। তাদের মধ্যে রিয়া বাসার ছাদে ও নাঈমা বাসার বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। রিতা ও নাফিসা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। দুজনই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে।
গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেলে উত্তরার বাসার বারান্দায় শুকাতে দেওয়া কাপড় আনতে গিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় নাঈমা। সে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে দশম শ্রেণিতে পড়ত।
শহীদ শিশুদের মধ্যে ৯১ জন শিক্ষার্থী, যা মোট মৃত্যুর ৬৮ শতাংশ। অন্য শিশুদের কেউ দোকানকর্মী, কেউ পোশাক কারখানার কর্মী, কেউ নির্মাণশ্রমিক, কেউ হকার আবার কেউবা ক্ষুদ্র ব্যবসায় জড়িত ছিল।
গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া কয়েকজন শিশুর নাম এখনো মানুষের মুখে মুখে। তাদের একজন পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র শাহারিয়ার খান আনাস (১৬)। ৫ আগস্ট বাড়িতে চিঠি লিখে সে যোগ দিয়েছিল বিক্ষোভে। চিঠিতে সে লিখেছিল, ‘মা, আমি মিছিলে যাচ্ছি। নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলাম না। মৃত্যুর ভয়ে স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে না থেকে সংগ্রামে নেমে গুলি খেয়ে বীরের মতো মৃত্যু অধিক শ্রেষ্ঠ।’ ওই দিন রাজধানীর চানখাঁরপুলে গুলিতে মৃত্যু হয় আনাসের।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি বলেন, শিশু–কিশোরসহ নিরস্ত্র মানুষ হত্যার এই ঘটনা গণহত্যা ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। যেভাবে নিজের দেশের শিশুদের হত্যা করা হয়েছে, তা জাতির মুখে কলঙ্ক লেপে দিয়েছে। এটা দেশের ইতিহাসে কলঙ্কিত অধ্যায়। অপর দিকে এটা গর্বেরও যে আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে বুক পেতে দিয়েছিল শিশু–কিশোরসহ সব বয়সী মানুষ।

প্রিন্ট/ডাউনলোডঃ ১২ই আগস্ট, ২০২৫, দুপুর ১২:১৬

© স্বত্ব দৈনিক সমধারা ২০২৫

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

প্রিন্ট করুন

সেভ করুন