সমধারা

আগস্ট ১৩, ২০২৫ , ৮:১০ অপরাহ্ণ

জাপানিদের ছাতাপ্রীতি

সমধারা রিপোর্ট

জাপানে রৌদ্রজ্জ্বল দিনেও অনেকে ছাতা নিয়ে হাঁটেন। অন্যদের মনে হতে পারে, হয়তো রোদ থেকে বাঁচতে তারা ছাতা নিয়ে ঘুরছেন। কিন্তু এই ধারণা ও জাপানিদের ছাতাপ্রীতির মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে।

ছাতা জাপানিদের ধর্মবিশ্বাস ও সংস্কৃতির অংশ। সূর্যোদয়ের এই দেশটির সংস্কৃতিতে ‘প্যারাসল’ বা ‘ওয়াগাসা’ (প্রথাগত কাগজের ছাতা) গভীর অর্থ বহন করে। তাদের বিশ্বাস, এগুলো আত্মা বা দেবতার থাকার জায়গা।

সম্প্রতি বিবিসি জাপানিদের রৌদ্রজ্জ্বল দিনেও ছাতা ব্যবহারের কারণ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

এ প্রসঙ্গে ওইতা দ্বীপের বেপ্পু বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের এমেরিটাস অধ্যাপক তাতসুও দানজিও সংবাদমাধ্যমটিকে জানান, জাপানি ঐতিহ্যে কিছু বস্তুকে ‘ইওরিশিরো’ বলা হয়। তাদের বিশ্বাস, ওইসব বস্তুগুলো দেবতা বা আত্মাকে নিজের দিকে টেনে আনে। ছাতা এর মধ্যে একটি।

জাপানে প্রথম ছাতা আসে নবম থেকে এগারো শতকের মধ্যে। তবে তখন এগুলো আবহাওয়ার জন্য নয়, বরং আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হতো। যেমন—দীর্ঘ হাতলওয়ালা সাশিকাকে-গাসা (এক ধরনের ছাতা) কেবল ধর্মীয় নেতা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। দাস, অধীনস্থ বা সহকারী সেই ব্যক্তির মাথার ওপর ছাতা ধরে রাখতেন।

দানজিওর মতে, ছাতার গোলাকার আকার আত্মার আকৃতির মতো, আর হাতল স্তম্ভের মতো। এখানে আত্মা নেমে আসতে পারে বলে প্রবীণরা বিশ্বাস করেন।

আজও জাপানে বহু উৎসবে এমন ছাতা দেখা যায় যেগুলো আধ্যাত্মিক কারণে ব্যবহার করা হয়।

দানজিও বিবিসিকে জানান, জাপানে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছাতার ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। পরবর্তী শতাব্দীগুলোয় ছাতার আধ্যাত্মিক বিশ্বাস বহাল থাকে।

বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এখনো জাপানের বিভিন্ন উৎসবে আধ্যাত্মিক গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। প্রতিবছর এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে কিয়োটোর ইয়াসুরাই মাত্সুরি উৎসব হয়। এই উৎসবে ছাতাগুলোকে ফুল দিয়ে সাজানো হয়। তারা বিশ্বাস করেন, ফুল দিয়ে সাজানো ছাতা মানুষের রোগ ও অসুস্থতা দূর করে।

প্রতি বছরের ৩ থেকে ৪ মে জাপানের উত্তরের ফুকুকা শহরে আয়োজন করা হয় হাকাতা দন্তাকু উৎসব। সেখানে বিশাল কাসাবোকো (বড় আকৃতির ছাতা) মিছিল দেখা যায়। তাদের বিশ্বাস, এর নিচ দিয়ে চলাচল করলে সুস্বাস্থ্য ও সুখবর মিলবে।

দেশটির ওকিনোশিমা দ্বীপে প্রতি বছর ১৩ থেকে ১৬ আগস্টের মধ্যে স্থানীয়রা বার্ষিক ওবন উৎসব উদযাপন করেন। সে সময় তারা সম্প্রতি মারা যাওয়া ব্যক্তিদের আত্মার থাকার জন্য ছাতার দৃষ্টিনন্দন কাঠামো তৈরি করে। প্রতি দুই বছর পর ১৬ আগস্ট রাতে সেসব ছাতার চারপাশে আধ্যাত্মিক নাচের আয়োজন করা হয়।

তারা বিশ্বাস করেন, এটি আত্মাদের নিরাপদে আত্মার জগতে ফেরানোর প্রতীকী মাধ্যম।

এমনকি ছাতা জাপানের সবচেয়ে পরিচিত অতিপ্রাকৃত ‘কাসা ইউকাই’র (ছাতা আত্মা) আশ্রয়স্থল। অতিপ্রাকৃত আত্মাগুলোকে শিল্পকর্মে, যেমন ‘নাইট প্যারেড অব দ্য মায়রিয়াড গবলিনস’ এ দেখা যায়। এখানে পরিত্যক্ত গৃহস্থালি জিনিসপত্রও জীবন্ত হয়ে ওঠে।

জাপানে এমন বিশ্বাস আছে, প্রতিদিনের ব্যবহার্য জিনিসপত্র আত্মা ধারণ করতে পারে। যেমন একটি ছাতা। কাসা ইউকাই সাধারণত একচোখা ও অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যের আত্মা। এটি জাপানের এনিমিস্ট বিশ্বাসের প্রতিফলন। কী সেই বিশ্বাস?

জাপানিরা বিশ্বাস করেন, কোনো জিনিস যদি দীর্ঘদিন ভালোবাসা পায়, তারও আত্মা হতে পারে।

প্রিন্ট/ডাউনলোডঃ ১১ নভেম্বর, ২০২৫, রাত ২:১৬

© স্বত্ব দৈনিক সমধারা ২০২৫

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

প্রিন্ট করুন

সেভ করুন