টোকিও থেকে তুরিন, ডেনভার থেকে ঢাকা, গোটা দুনিয়ার মানুষই পছন্দ করে আইসক্রিম। আইসক্রিমের অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণের সাথে তুলনা চলে এমন খাদ্য বা অন্য কিছু খুবই কম মিলবে।
কী এমন গুণের সমন্বয় ঘটেছে যে যার জোরে দুর্দমনীয় আর্কষণের অধিকারী হয়ে উঠেছে আইসক্রিম? প্রথমত, আইসক্রিম অতি মজাদার। ক্রিম বা ননি, দুধ, মিষ্টি, রুচিকর সুগন্ধ বা ফ্লেভারিং। এসবের মিশ্রণকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় হিমায়িত করলেই হয়ে ওঠে আইসক্রিম।
আইসক্রিম একই সাথে স্বাদগ্রন্থি এবং চোখ উভয়কেই আনন্দ এনে দেয়। আইসক্রিম স্মৃতিও উসকে দেয়। আইসক্রিম শব্দটির সাথে সাথেই ছোট বেলায় শোনা আ-ই-স-ক্রি-ম বা কু-ল-ফি- মা-লা-ই হাঁকটিও স্মৃতির কানে ভেসে উঠতে পারে।
আইসক্রিমের সাথে জড়িয়ে রয়েছে নানা ঘটনার আকর্ষণীয় ইতিহাস। চীনের সম্রাট থেকে ইংরেজ রাজা, সাবেক ক্রীতদাস থেকে চতুর ব্যবসায়ী, আমেরিকায় ইতালীয় অভিবাসী আইসক্রিম বিক্রেতাও রয়েছে এ ইতিহাসে লবকুশী হয়ে। বিলাসী খাদ্য হিসেবে বিত্তবানদের রসনার বাসনা পূরণ করার মধ্য দিয়ে আইসক্রিমের সূচনা। কালে কালে এর জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও। আমজনতার নাগালের মধ্যেও এসে যায় এর মূল্যমান।
মনে করা হয়, দুগ্ধজাত উপাদানের হিমায়িত মিষ্টি খাদ্য প্রথম চালু করে চীন। আইসক্রিম বলতে যা বোঝায়, তা বানানোর প্রক্রিয়া শুরু করে ইউরোপ। প্রধানত ইতালি এবং ফ্রান্স, ইংল্যান্ডসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশও রয়েছে। পরবর্তীতে আমেরিকায় পথ করে নেয় আইসক্রিম। দেশটিতে ব্যাপক জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছে যায় অল্প সময়ে। মার্কিনদের প্রিয় মিষ্টি খাবারই হয়ে ওঠে আইসক্রিমÑএমন কথাও শোনাবেন কেউ কেউ। অ্যাপেল পাইয়ের মতোই এটিও ঘরে ঘরে স্থান করে নেয়।
গোটা বিশ্বে আইসক্রিমকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে বিশাল ভূমিকায় ছিলেন মার্কিন আবিষ্কারক এবং ব্যবসায়ী মহল। আইসক্রিম কোনসহ অন্যান্য ধরনকে জনপ্রিয় করে তোলে দেশটি। আইসক্রিমের বাণিজ্যিক কারখানাও মার্কিন ব্যবসায়ীদের অবদান। আজকের দুনিয়ার নামকরা অনেক আইসক্রিম কোম্পানির শিকড় রয়েছে মার্কিন মুলুকে।
মার্কিন প্রভাব সত্ত্বেও স্থানীয়ভাবে নির্মিত আইসক্রিমের ঐতিহ্য টিকে আছে। ইতালির জেলেতো, তুরস্ক এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু কিছু এলাকায় অর্কিডের শিকড় দিয়ে তৈরি বিশেষ আইসক্রিম। এদিকে লং আইল্যান্ডে মার্কিন আইসক্রিম তৈরির উপকরণ ব্যবহার করে কুলফি তৈরি করেন এক আইসক্রিম প্রস্তুতকারক। ইরানের বাস্তানিয়ে মাহাল্লি বা স্থানীয় আইসক্রিম এমনই এক ধারাবাহিকতা।
সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের খ্যাতিমান প্রতীকের রূপ পেয়েছে আইসক্রিম। পিকাসোর মতো বিশ্বখ্যাত শিল্পীর চিত্রকলা থেকে শুরু করে হলিউডের জনপ্রিয় সিনেমা পর্যন্ত সর্বত্রই দেখা যাবে আইসিক্রিমকে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।